রূপগঞ্জে নবগঠিত ছাত্রলের কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি

রূপগঞ্জে নবগঠিত ছাত্রলের কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ

রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের কমিটিতে যোগ্য ও রাজপথের নেতাকর্মীদের বাদ দেয়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা। কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে নৌকা ঘেঁষা, ডাকাত, অছাত্রদের ও রাজপথে নিষ্ক্রিয়দের। ক্যাম্পাসভিত্তিক অবস্থানও নেই কারো।
ইতোমধ্যে কমিটিতে যোগ্যদের পদায়ন না করা ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি করার অভিযোগ এনে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে জুতা ঝাড়ু মিছিল করেছে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা। এ মিছিল থেকে অবিলম্বে কমিটি বাতিলের পাশাপাশি যোগ্যদের পদায়নের জন্য হুশিয়ারি দেয়া হয়।
গত মঙ্গলবার বিকেলে এ বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি নাহিদ হাসানকে আহবায়ক ও মাসুম বিল্লাহকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রদল। এদিকে নবগঠিত কমিটির আহবায়কের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সাথে বন্ধুত্বতা, সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের বিরুদ্ধে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করা এবং একজন যুগ্ম আহবায়ক বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ ও খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, নবগঠিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শরীফ হোসাইন গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিনের নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন, ভোট চেয়েছেন এবং তার নির্বাচন করেছেন।
নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়াসহ নির্বাচনের নানা ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। শরীফ এখনো প্রকাশ্যেই এলাকায় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন এবং আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতেও অংশ নেন বলে এলাকাবাসী জানায়। নবগঠিত কমিটির আহবায়ক নাহিদ হাসান ভুঁইয়া উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ফয়সাল শিকদার, সহ সভাপতি নাজমুল, কাঞ্চল পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি আইয়ুবুর খোকার সাথে চলাফেরা করেন এবং তারা তার বন্ধু হিসেবে উপজেলায় পরিচিত।
ছাত্রদলের এসব নেতাদের সাথে তার বিভিন্ন সময়ের ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। অভিযোগ গুরুত্বর না হলেও তার চেয়ে আরো যোগ্য ব্যক্তিকে পদায়ন না করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রনি পদায়ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিটিতে সদস্য সচিব পদ পাওয়া মাসুম বিল্লাহ তার পদের জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। রেকর্ডটি ছাত্রদলের কোন এক নেতার সাথে কথা বলার সময়ের। সে নেতাকে কাকে কিভাবে পদের জন্য টাকা দিয়েছেন সেকথা বলছিলেন মাসুম বিল্লাহ। সেই অডিও রেকর্ড এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেই তিনি পদ পেয়েছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের, যা অডিও রেকর্ডে প্রমানিত হয়েছে বলে মনে করেন তারা। কমিটিতে ৩নং যুগ্ম আহবায়ক জাইদুল ইসলামকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে ডাকাতির একটি ঘটনায় তিনি মহড়া দিচ্ছেন। ভিডিওটি প্রকাশ করা একাধিক ব্যক্তি জানান, একটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন জাইদুল। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তার সেই ভিডিও নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, কমিটিতে পদ পাওয়া যুগ্ম আহবায়ক রাফসান হোসেন, শামীম মিয়া, আব্দুল্লাহ রহমান জয়, শফিকুল ইসলাম, সদস্য শিমুল হোসেন, তরিকুল ইসলাম শান্ত, সানি মিয়া, আব্দুল্লাহ বাকি, আমান ভুঁইয়া তন্ময়কে স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তেমনভাবে চেনেন না। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কাছে এসব নেতারা ইউনিয়ন ওয়ার্ডে পদ পাবার মত যোগ্য বলে পরিগনিত। তবুও যোগ্য শত শত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এদের দিয়েই কমিটি করায় উঠেছে প্রশ্ন ও বিতর্ক।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, এ ধরনের কমিটি রাজপথে জোরালো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হবে। রাজপথে এখন দরকার শক্তিশালী কমিটি। সামনে সরকার পতনের আন্দোলনসহ নানা কর্মসূচীতে রাজপথে শক্ত অবস্থান নিতে পারে এমন নেতাকর্মীদের দিয়েই এখন কমিটি করা সময়ের দাবি। দ্রুত এ কমিটি বাতিল করে সবাইকে সমন্বয় করে শক্তিশালী ছাত্রদলের উপজেলার কমিটি ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের স্থগিত কমিটির আহবায়ক সুলতান মাহমুদ জানান, অভিযোগ শতভাগ সত্য।
এভাবে কি রাজনীতি হয়। রাজপথে যারা আমরা দীর্ঘদিন কাজ করেছি, মামলা হামলার শিকার হয়েছি এবং আমাদের দিনের বেশীরভাগ সময় এসব মামলায় আদালতে কাটে সেসব নেতাকর্মীদের বাদ দেয়া হয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেবেনা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
স্থগিত কমিটির সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান জানান, জেলার ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব টাকার বিনিময়ে এ কমিটি করেছেন এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট। কোন লাভে নয়তো তারা সক্রিয় রাজপথের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে কমিটি করলো? এর জবাব তো তাদের কাছে নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের বয়কট করেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কাছে আস্থা হারিয়েছেন তারা। দ্রুত কমিটি বাতিলের দাবি জানাই।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন